মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সন্ত্রাস দমনে ‘ভৌগোলিক সীমারেখায়’ বাঁধা থাকবে না ভারত। সন্ত্রাসবাদীরা যদি পাকিস্তানের গভীরে গিয়েও লুকিয়ে থাকে, তাহলেও প্রত্যাঘাত হবে। পাকিস্তান নয়, লড়াই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। আর সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার জন্য ভবিষ্যতে আরও প্রবল প্রত্যাঘাতের পথে হাঁটতে পারে ভারত। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন এবং ভাইস প্রেসিডন্ট কাজা কাল্লাসের সঙ্গে বৈঠকের পরে এ কথা জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিক্রিয়া
সন্ত্রাস দমনে কোনও ভূমিকা না নেওয়ায় পাকিস্তানকে ফের সরাসরি আক্রমণ করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার ব্রাসেলস সফরে গিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডন্ট কাজা কাল্লাসের সঙ্গে একটি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানকে ‘টেররিস্তান’ বলে আক্রমণ করেন জয়শঙ্কর। তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব হিসেবে না দেখে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা উচিত। এ বিষয়টিকে ‘ভারত বনাম পাকিস্তান’ না ভেবে ‘ভারত বনাম সন্ত্রাসিস্তান’ হিসেবেই দেখা উচিত।’ এই মন্তব্য করে তিনি সরাসরি পাকিস্তানকে একটি ‘সন্ত্রাসপ্রেমী রাষ্ট্র’ বলে আখ্যা দেন এবং সন্ত্রাস ও পারমাণবিক হুমকির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জিরো টলারেন্স নীতিতে চলার আহ্বান জানান। জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্রয়োজন।’’ এর পাশাপাশি পারমাণবিক হুমকির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধের আহ্বান জানান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সকল প্রকার সন্ত্রাসবাদের প্রতি সহনশীলতা থাকা উচিত নয়। এটাও অপরিহার্য যে আমরা কখনওই পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের কাছে নতি স্বীকার করি না। গোটা বিশ্ব এটি একটি চ্যালেঞ্জ, এবং এই বিষয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বোঝাপড়া থাকা অপরিহার্য।’’
পাকিস্তানের একদম ভিতরে ঢুকে আঘাত
বিদেশমন্ত্রী মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘যদি সন্ত্রাসবাদীদের তরফে কোনও উস্কানিমূলক পদক্ষেপ করা হয়, তবে ভারত এর পর পাকিস্তানের একদম ভিতরে ঢুকে আঘাত হানবে।’’ গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর জবাবে ৭ মে ভারতীয় সেনা পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ন’টি সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোয় হামলা চালিয়েছিল। ইউরোপীয় কমিশনের দুই শীর্ষ আধিকারিকের কাছে জয়শঙ্কর সন্ত্রাস দমনের বিষয়ে নয়াদিল্লির অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভারত আর এই ধরনের হামলা সহ্য করবে না। যদি এপ্রিলের মতো বর্বরতা আবার হয়, তাহলে তার কঠিন জবাব দেওয়া হবে। সেই জবাব হবে শুধু জঙ্গি গোষ্ঠী নয়, জঙ্গি নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও।’ তিনি সাফ জানান, ভারতের জবাব ‘ভৌগোলিক সীমারেখায়’ বাঁধা থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘ওরা যদি পাকিস্তানের গভীরে গিয়েও লুকিয়ে থাকে, আমরাও গভীরে ঢুকেই আঘাত করব।’ ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার পুনর্ব্যক্ত তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও সময়, যে কোনও জায়গায়, যদি তারা আমাদের জনগণের ক্ষতি করে থাকে, তাহলে আমদের অধিকার রয়েছে তাদের জবাব দেওয়ার।’’
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ সন্ত্রাস
জয়শঙ্কর বলেন, ‘পাকিস্তান সেই রাষ্ট্র যারা রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে সন্ত্রাসকে ব্যবহার করে।’ প্রশ্ন আসে, তাহলে কি উত্তেজনার পেছনে থাকা কারণগুলো এখনও জিইয়ে রয়েছে? জয়শঙ্করের জবাব, ‘আপনি যদি সন্ত্রাসের প্রতি প্রতিশ্রুতিকে সংঘাতের উৎস বলেন, তবে হ্যাঁ, সেটা এখনও আছে।’ ভারতের পাল্টা আক্রমণ নিয়েও মন্তব্য করেন জয়শঙ্কর। তিনি জানান, ‘আমার মতে, রাফালের কার্যকারিতা হোক বা ভারতের সামরিক ক্ষমতার প্রমাণ, পাকিস্তানের যে আটটি মূল বিমানঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে, তা গুগল স্যাটেলাইট চিত্রেও স্পষ্ট।’ জয়শঙ্কর আরও জোর দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। কিন্তু ভারতের সমস্যা হল পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে প্রকাশ্যে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপে সন্ত্রাসবাদ ঘটে, কিন্তু কোনও প্রতিবেশী ইউরোপীয় দেশ সন্ত্রাসবাদকে ঘোষিত রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ব্যবহার করে না।’’
ছ’দিনের ইউরোপ সফরে জয়শঙ্কর
২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারতের কূটনৈতিক উদ্যোগে ৩৩টি দেশের রাজধানীতে সাতটি বহুদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়, যাঁরা পাকিস্তানের সন্ত্রাসে মদতের তথ্য সহ ভারতের সংযত কিন্তু দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে অবগত করেন। এর পরে সোমবার ছ’দিনের ইউরোপ সফরে গিয়েছেন জয়শঙ্কর। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ-সহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নেরর শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করাই এই সফরের লক্ষ্য। সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক সক্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি জয়শঙ্কর-উরসুলা বৈঠকে ভারতের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply