S Jaishankar: “আমেরিকার আগেই মাল্টি-পোলার বিশ্বের কথা বলেছিল ভারত”, বললেন জয়শঙ্কর

S jaishankar Donald trump multipolarity

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “পুরনো উদারনৈতিক নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসার পর চরম চাপে পড়েছে।” কথাগুলি (Global Order) বললেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jaishankar)। তিনি মনে করেন, “এটি অনেক দিন ধরেই হয়ে আসছিল।” জয়শঙ্কর বিস্মিত যে তামাম বিশ্ব আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে ট্রাম্প যা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা-ই করছেন। তিনি বলেন, “হয়তো আমি তাঁকে আরও সরলভাবে নিয়েছিলাম।”

মাল্টি-পোলার বিশ্ব (S Jaishankar)

বিদেশমন্ত্রী লক্ষ্য করেছেন, আমেরিকানরা এখন যে মাল্টি-পোলার বিশ্বের কথা বলছেন, তা একসময় ছিল নয়াদিল্লির আলোচনার বিষয়। জয়শঙ্করের ইঙ্গিত, তিনি পুরোনো বিশ্বব্যবস্থার কিছুই মিস করবেন না। কারণ তিনি একজন বাস্তববাদী। তিনি যা আছে, তাই নিয়েই কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘কেউ বাস্তববাদী হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাঁর মধ্যে বিশ্বাস, প্রত্যয় কিংবা অনুভূতি নেই।’’ বিদেশমন্ত্রীর দাবি, ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’জনেই সমমনস্ক জাতীয়তাবাদী। ফলে বিরোধের অবকাশ নেই। গত ৫ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, পারস্পরিক শুল্ক চাপানোর নীতি থেকে বাদ পড়বে না ভারত। তিনি বলেন, ‘‘ভারত আমাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই ব্যবস্থা আমেরিকার প্রতি ন্যায্য নয়, কখনওই ছিল না।’’

তামাম বিশ্বের একটি শৃঙ্খলা প্রয়োজন

জয়শঙ্কর বলেন, “তামাম বিশ্বের একটি শৃঙ্খলা প্রয়োজন। অন্যথায় এটি খুবই অরাজক হয়ে উঠবে।” তিনি বলেন, “অসংযত প্রতিযোগিতা চাপ বাড়িয়ে তুলবে। ভারতের এমন একটি শৃঙ্খলার দরকার যা বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সেই শৃঙ্খলাকে নয়, যা পশ্চিমিদের পক্ষে ছিল।” তিনি বলেন, “পুরানো বিশ্বব্যবস্থার গুণাগুণ অতিরঞ্জিত করা হয়েছে (S Jaishankar)।” তিনি জানান, ভারত দীর্ঘদিন ধরে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পরে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি চলে এসেছে। ট্রাম্প ও মোদির নেতৃত্বে—যারা উভয়েই জাতীয়তাবাদী নেতা—এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সম্পর্কের এই উন্নতির মধ্যেও, ট্রাম্প বারবার ভারতকে শুল্ক অপব্যবহারকারী বলে আক্রমণ করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে মোদির হোয়াইট হাউস সফরের সময়ও শানিয়েছিলেন এই আক্রমণ।

শুল্ক ধাঁধার সমাধান

নয়াদিল্লি কীভাবে ট্রাম্পের শুল্ক ধাঁধার সমাধান করবে? জয়শঙ্কর বলেন, “আমি মনে করি, ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে কিছু ‘সমস্যা’ থাকলেও, শীঘ্রই দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হবে।” তিনি বলেন, “ট্রাম্প কঠোর জাতীয়তাবাদী। তবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিষয়ে বাস্তববাদীও।” ভারতের অবস্থান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়ে পশ্চিমিদের হতাশ করেছে। নয়াদিল্লি মস্কো থেকে তেল কেনা চালিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধের নিন্দা করা থেকে বিরত রয়েছে। জয়শঙ্কর বলেন, “ভারত সব সময় তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখে। তাই সে মস্কোর সঙ্গে তার পুরনো সম্পর্ক ত্যাগ করতে পারে না।” তিনি বলেন, “মানুষ প্রায়ই নীতিগত বিষয়গুলিকে বড় করে তোলেন (S Jaishankar)।”

দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাশিয়া চিনের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এটি কি নয়াদিল্লির জন্য সমস্যা হতে পারে? এর পরেই জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছি, যা ইঙ্গিত দেয় যে চিন ও পশ্চিমিদের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক পরিবর্তিত হলেও পুরানো অংশীদারদের সম্পর্ক ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে।” জয়শঙ্কর স্বীকার করেন, বেইজিংয়ের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। কারণ দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে। তিনি বলেন, “যদি ট্রাম্প চিনের সঙ্গে কোনও চুক্তি করেন, তাহলে সেই পরিস্থিতির জন্য ভারত তার নীতিগুলি প্রস্তুত রাখবে (Global Order)।”

ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতি

প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতি নিয়ে ভারতের রফতানিকারক সংস্থাগুলি চিন্তায় পড়লেও এখনও প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সাউথ ব্লক অফিসিয়ালি কিছু বলেনি। চলতি সপ্তাহে আমেরিকা সফরে গিয়ে ট্রাম্প সরকারের বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটকিনের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিরের ভবিষ্যৎমুখী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনাও করেন তিনি। শুক্রবার গোয়েল জানান, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ এর ‘বিকশিত ভারত’-এর পাশাপাশি সার্বিক রণকৌশলগত বোঝাপড়ার নীতি মেনে চলা হবে। ইতিমধ্যেই আমেরিকার বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক ছেঁটেছে মোদি সরকার (Global Order)। জয়শঙ্করের মন্তব্যের পরে অনেকে মনে করছেন, আগামী দিনে সেই তালিকা দীর্ঘতর হতে চলেছে (S Jaishankar)।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share