মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) চলাকালীন পাকিস্তানের নিক্ষেপ করা চিনা নির্মিত ‘পিএল-১৫ই’ ক্ষেপণাস্ত্র (Chinese PL-15E missile) সফলভাব ইন্টারসেপ্ট বা মাঝপথেই ধ্বংস করেছে ভারত। সেই ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ এসে পড়ে ভারতের ভূমিতে, যা বর্তমানে রয়েছে কেন্দ্রের হেফাজতে। এখন, এই ধ্বংসাবশেষ হয়ে উঠেছে বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তাবড় তাবড় দেশ এখন এই চিনা ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পরীক্ষা চাইছে। সেই কারণে, সকলে এক এক করে এখন ভারতের দ্বারস্থ হচ্ছে। আমেরিকা থেকে শুরু করে ফ্রান্স, জাপান থেকে শুরু করে ‘পঞ্চ অক্ষী’ জোট— কে নেই সেই তালিকায়!
‘পিএল-১৫ই’ বিভিআরএএএম ক্ষেপণাস্ত্র (Chinese PL-15E missile)
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর (Operation Sindoor) সময়, পাকিস্তানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সফলভাবে ধ্বংস করে দেয় ভারতের ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। ধ্বংস হওয়া পাকিস্তানের নিক্ষিপ্ত সেই ক্ষেপণাস্ত্রের তালিকায় ছিল চিনা নির্মিত ‘পিএল-১৫ই’ বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ এয়ার টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র (BVRAAM)। তালিকায় ছিল তুরস্কের ‘বায়রাক্তার টিবি-২’ কামিকাজে ড্রোন। আকাশে ধ্বংস হওয়ার পর এগুলির বহু অংশ ভারতের ভূমিতে এসে পড়ে। এমনকি, একটি গোটা চিনা ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ধার হয় পঞ্জাবের হোসিয়ারপুর থেকে। ওই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ছোড়া হয়েছিল পাক ফাইটার জেট থেকে। কিন্তু ইন্টারসেপ্ট হওয়ায় গোঁত্তা খেয়ে তা ভারতে পড়ে। কিন্তু, কোনও বিস্ফোরণ না হওয়ায় ক্ষেপণাস্ত্রটিকে (Chinese PL-15E missile) প্রায় গোটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
প্লিজ, একবার ক্ষেপণাস্ত্রটা দাও!
এই খবর চাউর হতে বেশি সময় লাগেনি। চিনা ক্ষেপণাস্ত্রটির ধ্বংসাবশেষ দ্রুত নিজেদের হেফাজতে নেয় ভারতীয় সেনা। বর্তমানে তা রয়েছে ডিআরডিও-র পরীক্ষাগারে। ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বিশ্লেষণ করছে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। একটা আস্ত চিনা ‘পিএল-১৫ই’ ক্ষেপণাস্ত্র (Chinese PL-15E missile) ভারতের হাতে এসে পড়েছে, এটা জানতে পেরেই বহু দেশের সামনে একটা বড় সুযোগের দ্বার খুলে গিয়েছে। চিনের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে পরীক্ষা করে প্রযুক্তি বোঝার সুযোগ পেতে তাদের তর সইছে না। সেই কারণে, তারা এক এক করে ভারতের দ্বারস্থ হচ্ছে। সকলের আবদার অনেকটা যেন এরকমই— প্লিজ, একবার ক্ষেপণাস্ত্রটা দাও।
চিনা ক্ষেপণাস্ত্রের দুর্বলতা বের করছে ভারত?
এই ‘পিএল-১৫ই’ (Chinese PL-15E missile) হল চিনের ‘পিএল-১৫’ মূল ক্ষেপণাস্ত্রের রফতানি সংস্করণ, যা পাকিস্তান সহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ব্যবহার করে। চিনের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন দ্বারা নির্মিত এই আকাশ-থেকে-আকাশ মিসাইলটির পাল্লা ১৪৫ কিমি। এতে ডুয়াল-পালস রকেট মোটর এবং অ্যাক্টিভ রেডার গাইডেন্স রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রে অত্যাধুনিক সিকার এবং ইলেকট্রনিক কাউন্টার-মেজার রয়েছে। এটি চিনা আস্ত্রাগারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বর্তমানে ডিআরডিও-র (DRDO) পরীক্ষাকেন্দ্রে এই ক্ষেপণাস্ত্রের কাটাছেঁড়া চলছে। এর ফলে, ভবিষ্যতের যুদ্ধে উপকৃত হতে পারে ভারত। এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রোপালশন সিস্টেম, গাইডেন্স প্রযুক্তি এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধের উপাদানগুলির অধ্যয়ন করে ভারত তার দুর্বলতা বের করে ফেলতে পারে। অচিরে এতে ভারতের নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করবে। চিন যে ভারতের সবচেয়ে বড় শত্রু, এটা একটা শিশুও জানে। ফলে, শত্রুর সামরিক প্রযুক্তি হাতে পাওয়া মানে ভবিষ্যতের যুদ্ধে এগিয়ে থাকা।
চিনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে সুবর্ণ সুযোগ
কিন্তু, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এত আগ্রহ কেন? এর অন্যতম কারণ হল, চিনের অ্যাডভান্সড ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সম্পর্কে অন্য দেশের কাছে সীমিত তথ্য থাকা। বেজিং বরাবরই গোপনীয়তা বজায় রাখে। যে কারণে, আমেরিকা থেকে শুরু করে জাপান— বিশ্বে চিনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ। ভারতের হাতে এসে পড়া চিনা ‘পিএল-১৫ই’ ক্ষেপণাস্ত্র (Chinese PL-15E missile) তাই এখন বিশ্বের কাছে ‘হট-কেক’। ফ্রান্স এবং জাপানের মতো দেশগুলি ক্ষেপণাস্ত্রটির অভ্যন্তরীণ গঠন এবং রেডার এড়িয়ে যাওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি বুঝতে আগ্রহী বলে জানা গিয়েছে। আবার আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত ‘ফাইভ আইজ’ গোয়েন্দা জোটও ধ্বংসাবশেষ হাতে পেতে নয়াদিল্লির সাথে আলোচনা করছে বলেও জানা গিয়েছে।
ভারতের হাতে এখন তুরুপের তাস
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর (Operation Sindoor) সময় হাতে আসা এই ধ্বংসাবশেষ আদৌ কারোর সঙ্গে ভাগ করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে ভারত এখনও পর্যন্ত কাউকে কিছুই জানায়নি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, তাড়াহুড়ো নয়, কৌশলগত ও কূটনৈতিক স্বার্থকে মাথায় রেখে সব দিক পর্যালোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেবে ভারত। তাঁদের মতে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের হাতে তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে। ভারতে এর বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হস্তান্তর করিয়ে নিতে পারে।
অন্যদিকে, প্রমাদ গুণছে চিন…
এদিকে, ভারতের হাতে তাদের আস্ত একখান অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে চিন। বেজিং ভালোই বুঝতে পারছে, প্রতিপক্ষ ভারত এখন ক্ষেপণাস্ত্রের (Chinese PL-15E missile) নাড়িভুঁড়ি বের করে পোস্ট-মর্টেম করছে এবং সব রহস্য বের করছে। এর পর, ভারত যদি ওই ক্ষেপণাস্ত্র অন্য দেশকে দেয়, তাহলে বিপদ বাড়বে বৈকি। এই ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্লেষণ করে চিনের জন্য পাল্টা দাওয়াই-এর ব্যবস্থা করে ফেলবে ভারত সহ গোটা বিশ্ব। এতে, চিনের উন্নত প্রযুক্তির ধার অনেকটাই ভোঁতা হতে পারে।
Leave a Reply