RSS: যোগাভ্যাসকে আরএসএস-এর শাখায় আবশ্যক করেন সংঘ প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার

RSS Swayamsevaks practiced Yoga since 1925 for personal social and nation development

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৫ সালে। প্রতিষ্ঠা করেন ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার। ভারতীয় যুবকদের সংগটিত করতে, তাঁদের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের আদর্শের বীজ রোপণ করতে তিনি এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর পাশাপাশি দেশের যুবকদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে তার সঙ্গেই যুক্ত করা হয় যোগাভ্যাসকে, যাতে যুবকদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক উন্নতি হয়। তাই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শাখাতে সূর্য নমস্কার, প্রণায়াম, ধ্যান এবং আরও বিভিন্ন যোগাসন করানো হতে থাকে তখন থেকেই।

যোগাভ্যাসের কথা বলতেন আরএসএস-এর দ্বিতীয় সরসংঘচালক

যোগাভ্যাসের (Yoga) মাধ্যমে স্বয়ংসেবকদের মধ্যে গড়ে উঠতে থাকে, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সমাজসেবা, সম্প্রীতি এবং আধ্যাত্মিকতা প্রভৃতি গুণ। জানা যায়, ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার নিয়মিতভাবে যোগাভ্যাস করতেন এবং তিনি শাখা পদ্ধতিতেও (RSS) যোগাভ্যাসকে রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে গুরু গোলওয়ালকর, যিনি সংঘের দ্বিতীয় সরসংঘচালক, তিনিও যোগাভ্যাসকে আরএসএস-এর অংশ হিসেবেই রেখে দেন। গুরুজি গোলওয়ালকর বলতেন, যদি জনগণ যোগাসন করে, তাহলে তাদের স্বাস্থ্য যেমন রক্ষা হয়, সেরকমই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। জনস্বাস্থ্য এই যোগাভ্যাসের মাধ্যমে উন্নত হবে এবং তাদের রোগ নিরাময়ে ওষুধ কেনার খরচও কমবে। সমস্ত দিক থেকেই তারা লাভবান হবে।

যোগ হল বিশ্বমঞ্চে ভারতের উপহার, প্রস্তাব পাশ হয় আরএসএস-এর প্রতিনিধি সভায়

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) মনে করে যে, যোগ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির উন্নতির জন্য কোনও অভ্যাস বা অনুশীলন নয়, এটি হচ্ছে সামাজিক উন্নতির জন্যই প্রয়োজন। যোগের মাধ্যমে দেশ গঠিত হবে। দেখা যায়, আরএসএস-এর বেশিরভাগ প্রশিক্ষণ বর্গে যোগাসন এবং ধ্যানকে বর্তমানে রাখা হয়। যোগ-এর মাধ্যমে স্বয়ংসেবকরা শৃঙ্খলা, উৎসাহ, শারীরিক সুস্থতা পান, যা তাঁদের সমাজের কাজ করতে আরও উৎসাহিত করে। বর্তমানে যোগাভ্যাস আবশ্যিক করা হয়েছে আরএসএস-এর যে কোনও প্রশিক্ষণ শিবিরে। যে কোনও শাখাতেও যোগাভ্যাস চলে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তুলে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরেছেন যোগ-এর গুরুত্ব (Yoga)। ২০১৫ সালে আরএসএস-এর অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভাতে প্রস্তাব পাস করা হয় যে যোগ হল বিশ্বমঞ্চে ভারতের উপহার।

২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা রাষ্ট্রসংঘের

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রসংঘের ৬৯তম সাধারণ সভায় ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা ছিল প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য গর্বের মুহূর্ত, কারণ যোগাভ্যাস ভারত থেকে উদ্ভূত। ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় এই প্রস্তাবটি রাখেন। নেপালসহ ১৭৫টি রাষ্ট্র এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর।

সংস্কৃতিভেদে বিশ্বজুড়ে চলছে যোগ-এর অনুশীলন

সারা বিশ্বজুড়ে অজস্র মানুষ বর্তমানে নানারকম সমস্যায় ভুগছেন, শারীরিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা। যোগ হল একমাত্র উপায় বা পদ্ধতি যার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলির নিরাময় সম্ভব এবং তা প্রাকৃতিক উপায়ে সম্ভব। তাই বিশ্বব্যাপী এই যোগাভ্যাসের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। মানুষ যোগকে গ্রহণ করেছেন তাঁদের সুস্থ থাকার জন্য, মানসিক ও শারীরিক উন্নতির জন্য। যোগ তাই আজ নির্দিষ্ট কোনও গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ নেই। পৃথিবীর যে কোনও সাধারণ মানুষ থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা প্রত্যেকেই আজ যোগাভ্যাস করেন। এর মধ্যে আছেন বড় বড় শিল্পপতি থেকে কূটনীতিকরাও।

যোগ শব্দের উৎপত্তি কীভাবে, ব্যাখ্যা করেছে আরএসএস

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভাতে (RSS) যোগের উপর যে প্রস্তাবনা হয়, সেখানে স্পষ্টভাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ব্যাখ্যা করে যে যোগের মূলগত উৎস এসেছে ‘যুজ’ (Yug) থেকে, যার অর্থ সংযুক্তিকরণ। যোগাসন শুধুমাত্র একটি শারীরিক অনুশীলন নয়। মহর্ষি পতঞ্জলির মতে, এটি হল একটি পবিত্র জীবনযাপনের অনুশীলন, যা মানুষের শরীর, মন, বুদ্ধি এবং আত্মাকে একত্রিত করে। বিভিন্ন হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে, যোগাভ্যাসের নানা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে—যোগব্যায়াম অশান্ত মনকে শান্ত করে। যোগ শব্দের অর্থ হলো মনের প্রশান্তি। এই ব্যাখ্যার ফলে এই দর্শনকে অনুসরণ করে নিজেদের জীবনে যোগাভ্যাসকে নিয়মিতভাবে অনুশীলন করে আজ ব্যক্তিজীবন সুন্দর ও শান্তিময় হয়ে উঠেছে।

ভারতীয় সাধু-সন্ত, যোগ গুরু এবং যোগ প্রশিক্ষকদের ধন্যবাদ জানিয়েছে আরএসএস

আরএসএস বিভিন্ন সময়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ভারতীয় সাধু-সন্ত, যোগ গুরু এবং যোগ প্রশিক্ষকদের, যাঁরা বিশ্বমঞ্চে যোগাভ্যাসকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। একইসঙ্গে আরএসএস ধন্যবাদ জানিয়েছে ভারতীয় কূটনীতিকদের, যাঁরা রাষ্ট্রসংঘসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনে অবদান রেখেছেন। অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা কেন্দ্রীয় সরকার তথা প্রতিটি রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে, তারা যেন যোগকে শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং গবেষণার কাজেও অন্তর্ভুক্ত করে, যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরে যোগাভ্যাসের প্রসার ঘটানো যায়।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share